আজ বৃহস্পতিবার, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চাঁইয়ে ফিরেছে স্বচ্ছলতা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :

সোনারগাঁয়ে তিন গ্রামের শতাধিক পরিবার মাছ ধরার বাঁশের চাঁই তৈরি করে স্বচ্ছল। এখন বর্ষা মৌসুম। চাঁইয়ের চাহিদা বেশি। তাই চাঁই তৈরির কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এ চাঁই শিল্পের বেশির ভাগ কারিগরই হলো নারী। সংসার সামলিয়ে ঘরে বসে এ কাজের মাধ্যমে তারা বাড়তি আয় করে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ভূমিকা রাখছেন। এ ছাড়া স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও মা-বাবাকে এ কাজে সহযোগিতা করছে।
উপজেলার সোনারগাঁ পৌরসভার সাহাপুর, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাতভাইয়া পাড়া ও রামগঞ্জ- এ তিন গ্রামের শতাধিক পরিবার চাঁই তৈরির পেশায় জড়িত। সারা বছর চাঁই তৈরি করা হলেও বর্ষা মৌসুমে চাঁইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। সোনারগাঁয়ের চাঁই শুধু সোনারগাঁয়েই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন চাঁই কারিগররা।
রামগঞ্জ গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, কেউ বাঁশ কাটছে, কেউ শলা তুলছে, কেউ শলা চাঁছছে আবার কেউবা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চাঁই বোনা ও বাঁধার কাজে। ঘরের বারান্দায়, উঠানে, গাছের ছাঁয়ায় যে যেখানে পারছে সেখানে বসেই চাঁই বানানোর কাজ করছে।
সোনারগাঁ পৌরসভার সাহাপুর গ্রামের চাঁই তৈরির কারিগর সনদ সরকার জানান, একটি মুলি বাঁশ দিয়ে চিংড়ি মাছ ধরার চারটি চাঁই হয়, আর একটি মোড়ল বাঁশ দিয়ে কুঁচে ধরার চাঁই হয় ২৫টি। পাঁচ ধরনের চাঁই বানানো হয় এই তিন গ্রামে। এ ছাড়া রকাই জাতের মুলি বাঁশ দিয়ে চাঁই তৈরি করা হয়। এ বাঁশ চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে আনা হয়। চাঁই বানানোর প্রধান কাঁচামাল হলো বাঁশ ও সুতা। বিভিন্ন মাপে বাঁশের শলা কেটে রোদে শুকিয়ে তার পর শুরু হয় চাঁই তৈরির কাজ। একটি চাঁই তৈরির জন্য প্রায় ৮টি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। সোনারগাঁয়ের আনন্দবাজার ও কাইকারটেক হাটে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা এ চাঁই কিনতে আসেন।
রামগঞ্জ গ্রামের বানু সরকার জানান, প্রতি সপ্তাহে তারা প্রায় ২০০টি চাঁই বিক্রি করে থাকেন। ১০০ ছোট মাঝারি চাঁই বানাতে খরচ হয় ৬-৮ হাজার টাকা, বিক্রি হয় ১০-১২ হাজার টাকায়। তাদের মাসিক আয় প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। এগুলো বিক্রি করার জন্য হাটে-বাজারে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। স্থানীয় পাইকাররাই বাড়িতে এসে নিয়ে যান।
কারিগররা আরও জানান, আকারভেদে ছোট সাইজের চাঁই বিক্রি হয় ১০০-১৫০ টাকায়। মাঝারি সাইজের চাঁই ৩০০-৫০০ ও বড় সাইজের চাঁই বিক্রি হয় ১-২ হাজার টাকায়।
কারিগর স্বপন দাস বলেন, ‘চাঁই তৈরির কাজ করে গড়ে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা উপার্জন করি। মোটামুটি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোই আছি।’
কারিগর দীনা সরকার বলেন, মুলি বাঁশের দাম আগে ছিল ২০-২৫ টাকা, বর্তমানে তা ২০০-৩০০ টাকা। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভও আগের চেয়ে কম হয়। তবে বর্তমানে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল বাজারে আসায় আগের চেয়ে চাঁই বিক্রি অনেকটাই কম।
বৈদ্যেরবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সূচনা রানী জানান, মা-বাবাকে সহযোগিতার জন্য সে চাঁই তৈরির কাজ করেন। এই চাঁই বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে।
চাঁই তৈরির কারিগর সাতভাইয়াপাড়ার রণজিৎ সরকার বলেন, চিংড়ি মাছের চাঁইয়ের চাহিদা বেশি। সোনারগাঁ ছাড়াও পটুয়াখালী, ফরিদপুর, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর জেলার মানুষ অর্ডার দিয়ে এখানে চাঁই কিনতে আসেন। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে এ শিল্পের আরও প্রসার ঘটত।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, বাঁশের তৈরি চাঁই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে।

সর্বশেষ সংবাদ